আগস্ট ১১, ২০১৮
নিউজ ডেস্কঃ
বর্ষ মওসুমের শেষ দিকে এসে রাজধানীর বাজারে সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে; গত এক সপ্তাহে দেশি ও আমদানি পেঁয়াজের দামও কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর-১ এবং মিরপুর-২ নম্বর এলাকায় বড়বাগ কাঁচাবাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের বাজারের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
বড়বাগ কাঁচাবাজারে গত এক সপ্তাহে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। একই চিত্র দেখা গেছে কারওয়ান বাজারেও।
বড়বাগে চিচিঙ্গা, পটল, কচুমুখী, লতি, ঢেঁড়শ, কাঁকরোল, বরবটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়। সিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি দেড়শ টাকায় আর প্রতিটি লাউ ৫০ টাকায়।
এই বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সগির মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে আসার কারণে সবজির দাম বেড়েছে। প্রতিবছরই এই সময়টাতে সবজির দাম বাড়ে। আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন সবজি আসলে দাম কমে আসবে।”
সবজির দাম বাড়ার জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বর্ষা মৌসুমের শুরুতে (বৈশাখ-জ্যেষ্ঠ) যে সবজি বাজারে আসে শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে সেসব গাছের আয়ু শেষ হয়ে আসে। ফলে একটা মাস বাজারে সবজির সঙ্কট থাকে, দামও একটু বেড়ে যায়।”
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় পেঁয়াজের দাম আরো এক দফা চড়েছে।
বড়বাগে মুদি দোকান আল মদিনা স্টোরের বিক্রেতা জানান, গত তিন দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা করে বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ এখন প্রতি কেজি ৫৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
মিরপুর-১ নম্বর বাজারে কেনাকাটা করতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, “বাজারে সবজির পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। সরকারের উচিত এই দিকে নজর দেওয়া।”
রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবেও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির একই চিত্র পাওয়া গেছে। গত এক মাসে পণ্যটির দাম ১৩ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
তবে কোরবানি ঈদের আগে আগে মাছ-মাংসের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই দাম বাড়েনি মাছের।
মাছের আড়ৎদার শামীম বলেন, “মাছের দাম গত দুই-তিন মাস ধরে একই রয়েছে। সরবরাহে ঘাটতি পড়লে মাঝে মধ্যে দাম একটু বেড়ে যায়, দুই একদিন পর তা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।”
মিরপুর-১ নম্বর বাজারে প্রতি কেজি সিলভার কার্প ১০০ টাকা, ছোট আকারের রূপচাঁদা ১২০ টাকা, রুই মাছ ২৮০ টাকা, বড় আকারের কাতল ৩৮০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত এক মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম বেড়ে গিয়ে প্রতি কেজি ১৫০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয়েছিল। তবে এই ঊর্ধ্বমুখী দাম কিছুটা পড়তির দিকে দেখা যায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে।
রাজধানীর অধিকাংশ বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া দেশি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এই জাতের মুরগির দাম কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা করে কমেছে।
মসলার বাজার স্থিতিশীল
কোরবানি ঈদ আসন্ন হলেও মসলার বাজার এখনও ‘স্থিতিশীল’ থাকায় ক্রেতারা স্বস্তি প্রকাশ করছেন।
এলাচ ছাড়া অন্য কোনো মসলার দাম গত তিন মাসে বাড়েনি বলে কয়েকজন পাইকারি বিক্রেতা জানিয়েছেন।
কারওয়ান বাজারে মসলার পাইকারি দোকান দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মো. রাসেল বলেন, গত তিন মাস ধরেই মসলার বাজার স্থিতিশীল আছে। ঈদকে সামনে রেখেও মসলার বাজার স্থিতিশীল দেখা যাচ্ছে।
“মাঝখানে রোজার মধ্যে কয়েকটি মসলার দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে তাও আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।”
বাজারে প্রতি কেজি লবঙ্গ ৯৮০ থেকে এক হাজার টাকা, এলাচ ১৬৫০ থেকে ১৭৫০ টাকা, দারুচিনি ৩০০ টাকা, জিরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এম আর ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন বলেন, “গত এক মাসে মানভেদে এলাচের দাম কেজিতে অন্তত একশ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বাকি সব ধরনের মসলার দামই স্থিতিশীল।”
মসলার দাম কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়ে যাওয়াকে ‘অস্বাভাবিক’ মনে করছেন না ঈদের আগে আগে মসলা কিনতে আসা ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা ইলিয়াস।
“এবার ঈদের আগে দাম অনেকটাই স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। আগামী কয়েকদিন এই পরিস্থিতি বজায় থাকলেই ভালো।”
তবে পাইকারি বাজারে দাম না বাড়লেও পাড়ার খুচরা দোকানগুলোতে মসলার দাম বেড়ে যায় বলে অভিযোগ এই ক্রেতার।